যদি আপনি আপনার সন্তানকে অশ্লীল ভিডিও থেকে রক্ষা করতে চান তাহলে- গোপনে এই সেটিংসটি করে নিন।

 

বর্তমানে আমাদের সমাজে শতকরা ৭৭ ভাগ শিক্ষার্থী পর্নোগ্রাফি তে আসক্ত। শুধু উঠতি বয়সের কিশোর কিশোরীরা ই নয়, অনেক প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ রয়েছেন, যারা পর্নগ্রাফিতে আসক্ত। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় চার কোটি বিভিন্ন বয়সী মানুষ মোটামুটি নিয়মিতভাবে পর্নোগ্রাফি দেখে থাকে। পাশ্চাত্যের গবেষণায় দেখা যায়, ১৮ বছরের নিচে প্রতি ১০ জন কিশোরের মধ্যে ৯ জন আর প্রতি ১০ জন কিশোরীর মধ্যে ৬ জন অন্তত একবার পর্নোগ্রাফি দেখেছে। বাংলাদেশে খুব ছোট আকারের একটি জরিপে দেখা গেছে, স্কুলপড়ুয়া কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ নিয়মিত পর্নোগ্রাফি দেখে থাকে। প্রথমে তৈরি হয় কৌতূহল, এরপর আগ্রহ, আগ্রহ থেকে অভ্যাস আর অভ্যাস থেকে আসক্তি। 

 পর্নো আসক্তির খারাপ দিক •
 যৌন বিষয় সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব তৈরি হয়। যৌনতার যে একটি বড় পরিসর রয়েছে তা না বুঝে খণ্ডিতভাবে ভুল আর অসম্পূর্ণ জ্ঞানলাভ করে। • এই আসক্তি নৈতিকতা আর ধর্মচর্চার পরিপন্থী। • বিবাহিত জীবনকে বাধাগ্রস্ত করে, যৌনস্পৃহার পরিবর্তন ঘটায়। বিকৃত যৌনচর্চার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
 • আসক্ত হয়ে পড়লে দিনের একটা বড় সময় এ বিষয় নিয়ে চিন্তা করে, চর্চা করে। ফলে পড়ালেখার মান খারাপ হয়, কর্মক্ষেত্রে কাজের মান কমে যায়। উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়। • নিজেকে সামাজিক কাজগুলো থেকে গুটিয়ে রাখে, কখনো হীনম্মন্যতা তৈরি হয়। 
 • আচরণের পরিবর্তন দেখা যায়, হঠাৎ করে রেগে ওঠে, মেজাজ খিটখিটে থাকে, বিষণ্নতা দেখা দেয়। পর্নোর প্রভাবে নানা সামাজিক বা যৌন অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে। 
 • মার্কিন গবেষক ড. জুডিথ রিসম্যান পর্নোকে ‘ইরোটোটক্সিন’ বলে আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘পর্নোচর্চা করতে থাকলে মস্তিষ্কে ডোপামিন, এপিনেফ্রিন, এন্ডোরফিন জাতীয় রাসায়নিক পদার্থের সাম্যাবস্থা নষ্ট হয়, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, চিন্তা ও আচরণের সমস্যা দেখা দেয়।’

 • আসক্ত ব্যক্তি জড়িয়ে যেতে পারে সাইবার অপরাধে বা নিজেও সাইবার অপরাধের শিকার হতে পারে।

 • পর্নো আসক্তি অনেক সময় অবসেসিভ কম্পালসিভ সমস্যা অথবা আবেগের বাড়াবাড়ির সমস্যার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হয়ে উঠতে পারে। পর্নো আসক্তি থেকে জন্ম নিতে পারে মাদকাসক্তির মতো আরেকটি ভয়াবহ অসুখ। প্রতিরোধ আর প্রতিকার কিশোর-কিশোরীসহ যে কাউকে পর্নো আসক্তি থেকে দূরে রাখতে হলে একদিকে প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে আবার অন্যদিকে কেউ আসক্ত হয়ে পড়লে প্রতিকারও করতে হবে। এর জন্য সর্বপ্রথম আপনার সন্তান কে নামাজ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে।
ইসলামের দৃষ্টিতে পর্ণগ্রাফী দেখা হারাম এবং গুনাহর কাজ। এতে চোখের জ্যোতি কমে যায়। এতে পর নারী দেখার যে গুনাহ অর্থাৎ গুনাহ গুনাহ হয়। কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চক্ষুকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। এটাই তাদের জন্য পবিত্রতম পন্থা। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদের বলুন তারা যেন তাদের চক্ষুকে অবনত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। (সূরা নূরঃ ৩০,৩১) চাই তা পত্রিকা, ম্যাগাজিন, টেলিভিশন, সিডি মোবাইল বা অন্য কোন পন্থায় হোক না কেন। বিশেষ করে কেউ যদি এ সব দেখাতে অভ্যস্ত হয়ে যায় তবে তার ভয়াবহতা আরও মারাত্মক ভয়ংকর। নি:সন্দেহে তা চোখের জিনার অন্তর্ভুক্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, চোখের যিনা হলা (বেগানা নারী বা তার ছবি, ভিডিও ইত্যাদি) দেখা, জিহ্বার জিনা হল, (বেগানা নারীর সাথে যৌন সংক্রান্ত) কথা বলা, মানুষের মনে কামনা ও বাসনার উদ্রেক হয় কিন্তু তার লজ্জা স্থান সেই কামনা-বাসনাকে সত্য বা মিথ্যায় পরিণত করে। (বুখারী ও মুসলিম) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর চেয়ে অধিক আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন আর কেউ নেই; এজন্যই তিনি অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন আর আল্লাহর চেয়ে অধিক প্রশংসাপ্রিয় আর কেউ নেই। (বুখারীঃ ৫২২০) তারা এসব দেখে তারা দৌহিক ও মানষিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাদের ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়ার আশংকা সৃষ্টি হয়, ধীরে ধীরে চারিত্রিক অধ:পতন দেখা দেয়, বিকৃত স্বভাব জন্ম নেয়, লজ্জা-শরম কমে যায়, ইভটিজিং বৃদ্ধি পায়, আত্মমর্যাদা ও ব্যক্তিত্ব বোধ কমে যায়, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মনমালিন্য সৃষ্টি হয়। সর্বোপরি, আল্লাহ তায়ালার সাথে সম্পর্ক দুর্বল হয়ে যায়। এমন হাজারো সমস্যা ও ফিতনা-ফ্যাসাদ তৈরি হয়। সুতরাং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য যত খারাপ কাজ আছে তা থেকে বিরত থাকাই তাক্বওয়ার পরিচয়। তাই মুসলমানদের জন্য পর্ণ গ্রাফী সহ সকল হারাম জিনিস দেখা থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন,"বলুন,আমার প্রতিপালক নিষিদ্ধ করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা।"(সূরা আল-আ'রাফ,আয়াত ৩৩) এছাড়াও আল্লাহ আরো বলেন,"প্রকাশ্য কিংবা গোপন অশ্লীলতার নিকটেও যাবে না।"(সূরা আল-আনআম,আয়াত ১৫১) জনাব,পর্ণ ভিডিও দেখা কী অশ্লীলতা নয়?আর আপনি কী জানেন যে পর্ণ(porn) শব্দটির আর্থ কী?এর অর্থ হলো "অশ্লীলতা"।অথ্যাৎ "পর্ণ ভিডিও" অর্থ "অশ্লীল ভিডিও"।তাই উপরোক্ত আয়াত আলোচনা থেকে এটি প্রমাণ হয় যে,"পর্ণ ভিডিও দেখা সম্পূর্ণ হারাম। আমাদের মধ্যে অনেক মা বাবাই আছেন যারা তাদের সন্তানের হাতে মুঠোফোন দিতে চান না যদি তার সন্তান খারাপ হয়ে যায়,বা পর্নোগ্রাফি তে আসক্ত হয়ে যায়। তবে চলুন আমরা মোবাইলে কিছু সেটিংস সম্পর্কে ধরনা নি। যার ফলে আপনার সন্তান মোবাইলে কোনোদিন পর্নোগ্রাফি সার্চ করলেও সেসব সাইটে ডুকতে পারবে না।এমনকি আপনার মোবাইলে খারাপ বিজ্ঞাপন আসাও বন্ধ হয়ে যাবে। অনেক সময় বিভিন্ন ওয়েভ সাইট ভিজিট করার পর রিডাইরেক্ট হয়ে সেসব খারাপ বা অশ্লীল সাইটে নিয়ে যা। চলুন তার থেকে কিভাবে নিজেকে সাময়িক ভাবে রক্ষা করা যায় তা সম্পর্কে ধারনা নি। সাধারণত সবার মোবাইলেই একইরকম সেটিংস থাকে। তবে একেক একেক মোবাইলে এক এক ভাবে দেওয়া।
Step1- সর্বপ্রথম মোবাইলের সেটিংস অপশনে আপনাকে যেতে হবে। 
Step2 - তারপর সার্চ Option গিয়ে সার্চ করুন " private DNS" 
Step3- private DNS সার্চ করার পর private DNS নামে একটি Option দেখেতে পাবেন-তাতে ক্লিক করুন।
Step4- Private DNS এ যাওয়ার পর private DNS provider hostname নামে একটি Option দেখতে পাবেন, তাতে ক্লিক করে সিলেক্ট করে নিন। 
Step5- private DNS provider hostname সিলেক্ট করার পর, সেখানে একটি Textbox দেখতে পাবেন। তাতে এই কোড টি কপি করে পেস্ট করে দিন। কোড-
   adult-filter-dns.cleanbrowsing.org   
কোনো প্রকার স্পেচ দেওয়া যাবে না। সবশেষে সেভ করে দিন। এবং নিজেই গুগলে যে কোনো একটি অশ্লীল নাম দিয়ে সার্চ করে দেখুন। তা কখনই আসবে না। যদি আপনি আপনার সন্তানকে অশ্লীল ভিডিও থেকে রক্ষা করতে চান তাহলে- গোপনে এই সেটিংসটি করে নিন। অবশেষে একটা কথাই বলবো, শুধু একটি সেটিংস আপনার মন মানসিকত ঠিক করতে পারবে না, তবে এটি সাময়িক ভাবে এসব থেকে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদত করুন, আল্লাহ তায়ালা নিজেই আমাদোর এসব থেকে রক্ষা করবেন,ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের এসব খারাপ,অশ্লীলতা থেকে রক্ষা করুক। আমিন।




Post a Comment

Previous Post Next Post